স্টাফ রিপোর্টার
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে খুলনায় চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। মহানগর থেকে গ্রামাঞ্চল—সবখানেই প্রতিমা গড়া, রঙের কাজ, আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল নির্মাণে দিন-রাত কাজ করছেন শিল্পীরা।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনী ধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে। আর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল পূজা। এ উপলক্ষে খুলনা নগরীর সোনাপট্টি মন্দিরে ভারতের তামিল মন্দিরের আদলে বিশাল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। বাজার কালীবাড়ী, আর্য্য ধর্মসভা, শীতলাবাড়ী, শিববাড়ী ও দৌলতপুরসহ বিভিন্ন মন্দিরেও বিশেষভাবে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপগুলো।
খুলনার ডুমুরিয়ার খরসংগ এলাকায় এবার সবচেয়ে বড় আয়োজন হতে যাচ্ছে, যেখানে ২০২টি প্রতিমা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজা উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুব্রত সরকার জানান, ‘‘শারদীয় দুর্গোৎসব কর্মসংস্থান ও আনন্দের বড় উৎস। এ বছরও খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় আয়োজন আমাদের এলাকায় হবে।’’
খুলনা জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর খুলনা মহানগরে ১২০টি ও জেলায় ৮৫৭টি মণ্ডপে পূজা হবে। মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭৭টিতে, যা গত বছরের তুলনায় ১০৫টি বেশি। এর মধ্যে মহানগরের সদর থানায় ২৪টি, সোনাডাঙ্গায় ১১টি, খালিশপুরে ৭টি, দৌলতপুরে ২৪টি, খানজাহান আলীতে ৮টি, হরিনটানায় ৫টি, লবনচোরায় ৯টি ও আড়ংঘাটায় ৩২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলায় ডুমুরিয়ায় ২১৪টি, পাইকগাছায় ১৪১টি, বটিয়াঘাটায় ১০৫টি, তেরখাদায় ৯৮টি, রূপসায় ৭৫টি, দাকোপে ৭৪টি, দিঘলিয়ায় ৬১টি, কয়রায় ৫৫টি ও ফুলতলায় ৩৪টি মণ্ডপে পূজা হবে।
পূজা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহলের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে।
শহরের অলিগলি, বিপণিবিতান ও গ্রামীণ বাজারে ইতিমধ্যেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। শিশু-কিশোরদের মধ্যে উৎসবের উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। পূজাকে কেন্দ্র করে নগরীর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করছে।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দুর্গোৎসব খুলনায় এখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ভক্তদের সঙ্গে অন্য ধর্মের মানুষও প্রতিমা দর্শনে আসছেন—যা তৈরি করছে সম্প্রীতির এক অনন্য পরিবেশ।