খাঁন মোঃ শফিকুল ইসলাম
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধিতার কারণে তারা প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তবে তাদেরও স্বপ্ন, যোগ্যতা এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার আগ্রহ আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% কোনো না কোনো ধরণের প্রতিবন্ধিতার মুখোমুখি। বাংলাদেশে সরকারি তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৩৭ লক্ষ নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন, যদিও বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রতিনিধিত্ব ও অধিকার সুরক্ষা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়।
শিক্ষায় অগ্রগতি, কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা
গত এক দশকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার হার বেড়েছে। বিশেষায়িত বিদ্যালয়, সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফলে অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষিত হচ্ছে। তবে চাকরির বাজারে তাদের সুযোগ এখনও সীমিত। সরকারি চাকরিতে ১% কোটা থাকলেও বাস্তবায়ন দুর্বল, আর বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান প্রায়শই অবকাঠামোগত ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের নিয়োগে উদাসীন।
আইন থাকলেও বাস্তবায়ন ঝুঁকিপূর্ণ
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী অধিকার সংক্রান্ত আইন যেমন:
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩
বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৮
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩
এই আইনগুলো বাস্তবে যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। অনেক ভবন বা পরিবহণ মাধ্যম প্রতিবন্ধী প্রবেশগম্য নয়, কোটা কার্যকরভাবে পূর্ণ হয় না। এর মূল কারণ- কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, জবাবদিহিতার অভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্বের অভাব।
নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। ভোটাধিকার প্রয়োগে সহায়তা, রাজনৈতিক দলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি এবং নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে।
সংসদে প্রতিবন্ধী আসন সংরক্ষণ করা সময়ের দাবি। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করবে এবং নীতি-নির্ধারণে তাদের প্রভাব বাড়াবে। একজন প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি তার সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বললে তা হাজারো অ-প্রতিবন্ধী প্রতিনিধির চেয়ে বেশি কার্যকর হবে।
সমাজের অদৃশ্য দেয়াল ভেঙে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। যেখানে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তার মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের জন্য পিছিয়ে পড়বেন না।