খুলনা ব্যুরোঃ-
“ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই” স্লোগানকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশাশুনি উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদের সংগঠন “আলোর পথে” এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। ইদুল ফিতরের দিন খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনের ফলে আনুলিয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের পানিবন্দি হওয়ার প্রেক্ষিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি লাঘবের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রশাসনের অবহেলা এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য নিন্দা জানানো হয়। এছাড়াও খোলপেটুয়া নদীর সর্বশেষ ভাঙনের কারণ হিসেবে স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হেলাল সালাহউদ্দিন বলেন, “প্রতি বছরই এ অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। আর এর কারণে সৃষ্ট নদীভাঙনের ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবন নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। এর আশু সমাধান প্রয়োজন। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণই এ সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায়। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা একটু আন্তরিক হলে এবং তাদের সদিচ্ছা থাকলে খোলপেটুয়া নদীর সর্বশেষ ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিছু মানুষের বিশেষ করে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের অবহেলার কারণে সৃষ্ট এই নদীভাঙন সৃষ্টি আসলে অসহায়, দরিদ্র মানুষের সাথে মশকরা করা। যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান প্রয়োজন। ”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দীন হোসেন সাম্প্রতিক নদীভাঙন নিয়ে তার শ্লেষ প্রকাশ করে বলেন, “প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতাদের গাফিলতির কারণে নদীভাঙন সৃষ্টি হবে, আর তার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে- এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ ভাঙন প্রতিরোধ করা যেত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেটা আপনাদের গাফিলতি, সেটা বহু মানুষের কান্না।” তিনি এ অঞ্চলের মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষার্থী আল-আমিন সাম্প্রতিক নদীভাঙনের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দোষারোপ করে বলেন, “মানুষের কান্না দেখে যাদের অন্তরে মায়া আসে না, তারা জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।” তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড-সহ (পাউবো) এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষকেও এই নদীভাঙনের জন্য দায়ী করেন। এ অঞ্চলের মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য আশু টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
উক্ত মানববন্ধন শেষে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা-সহ ৬ দফা দাবিতে প্রশাসনের বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, গত সোমবার ইদের দিন সকালে সোমবার ঈদের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার কাছের প্রায় দেড়শ ফুট এলাকার বেড়িবাঁধ খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে বিছট, বল্লভপুর, বাসুদেবপু, আনুলিয়া, নয়াখালী, কাকবাসিয়া-সহ প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা জমির চিংড়ির ঘের।